দুস্তর পারাবার
– শচীদুলাল পাল
অর্ণবের একদিন ইচ্ছে হলো আবদ্ধ হয়ে না থেকে জগতটাকে দেখবে। হাজার জন যাত্রীদের সাথে জলজাহাজে জলযাত্রায় ভেসে পড়লো। অনন্ত জলরাশি। নগর গ্রাম ছাড়িয়ে মাঝ সমুদ্রে। শুধু জল আর জল।অকুল পাথার। কত দিন রাত এভাবে সবার সাথে কেটে যাচ্ছিল।
হঠাৎ একদিন মহাপ্রলয়। ঘূর্ণিঝড়ে উত্তাল তরঙ্গে মাঝ সমুদ্রে ভরাডুবি। কিছু বোঝার পূর্বে আকস্মিক জাহাজের ন’শো নিরানব্বই জনই ডুবে তলিয়ে গেল। একমাত্র অর্ণব লাইফ জ্যাকেটের সাহায্যে বেঁচে রইলো। ভাসতে ভাসতে জলের তীব্র স্রোতে ছুটে চলেছিল। এভাবে কত দিন গেলো, কত রাত এলো। শুধু অনন্ত জলরাশি। বাঁচার কোনো ভরসা নেই। ভাবলো কোনো জাহাজ এসে তাকে জল থেকে তুলে আশ্রয় দেবে। অর্ণব বাঁচার আশা ত্যাগ করে ভাসতে লাগলো। একদিন দেখলো দূরে এক দ্বীপ। সে আপ্রাণ চেষ্টা করে দ্বীপের দিকে যাবার চেষ্টা করে সফল হলো। প্রাণপণে চীৎকার করে বললো “কে কোথায় আছো আমাকে বাঁচাও”
কেউ সাড়া দিলো না।
দ্বীপে উঠে দেখল যতদুর দৃষ্টি চলে কোথাও কোনো জনবসতি নাই। কোনো জনপ্রাণী নাই। খাবারও নাই।
সে চিৎকার করলো। কাঁদতে কাঁদতে আরো ক্লান্ত হয়ে পড়লো।
অবসন্ন শরীরে একটু জিরিয়ে নিয়ে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে একটা কুটির তৈরি করল। শীত থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য ডালপাতা সংগ্রহ করে পকেটের লাইটারের সাহায্যে আগুন জ্বাললো।
শরীরে কিছুটা বল এলে খাবারের সন্ধানে বের হলো কিন্তু অনেকটা দূরে গিয়েও কোনো খাবারের সন্ধান পেল না। হঠাৎ দেখল একটা আগুনের শিখা। দেখলো তারই পর্ণকুটিরে আগুন লেগে গেছে। এবার সে নিরাশায় ভেঙে পড়লো। মাকে ডাকতে ডাকতে সংজ্ঞা হারালো।
জ্ঞান ফিরে পেতে দেখলো মুখে অমৃতের ফোঁটা। চোখ মেলে চেয়ে দেখলো এক নারী।তার স্তন থেকে স্তনদুগ্ধের ধারা মুখে এসে পড়ছে।
নারীমূর্তি কাছে এগিয়ে এসে ঈশারায় স্তনদুগ্ধ পান করতে বলল। কোলে মাথা নিয়ে স্তনবৃন্ত অর্ণবের মুখে পুরে পরম আদরে স্তনদান করতে লাগলো। ধীরে ধীরে প্রাণ ও শক্তি সঞ্চয় করলো। মমতাময়ী নারীর সেবা শুশ্রূষায় বাঁচার আনন্দে আত্মহারা হলো। তারপর সেই নারী তাদের বসতির কুটিরে নিয়ে গেল। সেখানে সবাই দ্বীপের আদিবাসী। তারা ঈশারায় জানালো আগুন দেখে ছুটে গেছি।
অর্ণব মনে ভাবলো সর্বশান্ত হয়ে যাবার পরই নারীরূপী মহামানবী আমায় রক্ষা করেছে। ইনিই আমার মা। ষসর্বশক্তিরূপীনি মা।
দ্বীপের মনোরম পরিবেশ। সুন্দর স্নিগ্ধ বাতাবরণ।
গাছে নানান অচেনা ফল। তর তর করে বইয়ে চলেছে এক স্রোতস্বিনী নদী।সেখানে নারী পুরুষ স্নান করছে।
সবাই নিজেদের তৈরি মাটির ঘরে থাকে। রাতে চাঁদের আলো। অর্ণব তাদের কথাবার্তা, গাছে চড়া, জীবন যাত্রা প্রণালী অনুকরণ করে নিল। সে তাদের মনজয় করে তাদের সাথে একাত্ম হয়ে গেল। তার এক আলাদা ঘর ছিল।
তার সেবা শুশ্রূষায় এক যুবতী নারী আসতো। মেয়েটি সান্নিধ্য লাভ করতে চাইতো। কিন্তু অর্ণব তার মধ্যে এক মাতৃ মুর্তি দেখতো। সব মেয়েকেই সে মায়ের মতো দেখতো।
একদিন সবাই দেখল অর্ণব নেই। সবাই সারা দ্বীপ খুঁজে সন্ধান পেল সমুদ্রের ধারে।
জীবনদাত্রী সেই মা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল “আমি তোমার মা। কিন্তু সবাই তোমার মা হতে পারে না।”
তুমি যদি আমাকেই শুধু মা বলে মনে করো তাহলে আমি যা বলছি তাই তোমাকে শুনতে হবে। বলো শুনবে?
এবার অর্ণবের মনের পরিবর্তন হলো বলল ” হ্যাঁ, বলো। তুমি আমার মা যা বলবে তাই শুনবো।”
পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল সেই অপরূপা অষ্টাদশী তরুণী। তাকে সামনে নিয়ে এসে বলল “আজ থেকে এই মেয়েই তোমার ঘরণী।” মেয়েটি মনেপ্রাণে অর্ণবকে ভালোবাসতো।সর্ব জনসমক্ষে মেয়েটি অর্ণবকে আলিঙ্গন করলো।
দ্বীপের নিয়মানুসারে মহাধুমধামে তাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
🙏🙏🙏
অপূর্ব লিখেছেন কবি খুব ভালো লাগলো
অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় সুহৃদ সাহিত্যিক।
আপনার মন্তব্যে প্রীত হলাম ।